ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ মিয়ানমার – দৈনিক জনকন্ঠ

পর্যটকদের নতুন গন্তব্য হিসেবে দ্রুত স্বীকৃতি পাচ্ছে মিয়ানমার। বাংলাদেশী ভ্রমণপিপাসুদের কাছে দেশটি এখন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের বিকল্প হিসেবে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিনই মিয়ানমারমুখী যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। গত এক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তিন কারণে মিয়ানমারের দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশীরা। স্বল্প দূরত্ব, স্বল্পব্যয় ও অবকাঠামোগত সুবিধার জন্যই মিয়ানমার এখন ভ্রমণপিপাসুদের টানছে। বৌদ্ধ ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ দেশটির আবহাওয়াও চমৎকার। এখানকার নৈসর্গিক দৃশ্যাবলীর পাশাপাশি হাজার বছরের ইতিহাসও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ মিয়ানমারের মানুষের আতিথেয়তাও পর্যটকদের মুগ্ধ করার মতো। রয়েছে বিপুল খণিজ, যা দেখার মতো, শেখার মতো। ঢাকা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার আকাশ পথের দূরত্বে মিয়ানমারে রয়েছে বাণিজ্যিক পর্যটনেরও বিপুল সম্ভাবনা। দীর্ঘ ছয় দশকের সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রের উন্মেষলগ্নে দেশটির নতুন সরকারও পর্যটকদের জন্য আরও উদারনীতি গ্রহণ করেছে। মিয়ানমারে বাংলাদেশী ফার্মাসিউটিক্যালের অন্যতম সম্ভাবনাময় বাজার গড়ে তোলার পাশাপাশি অন্যান্য খাতেরও প্রসার ঘটছে। বছর তিনেক আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সরাসরি ইয়াঙ্গুন ফ্লাইট চালু করার পর দুদেশের মধ্যে যোগাযোগের দীর্ঘ বন্ধ্যত্বের অবসান ঘটে। বিমানের পরই যোগ হয় বেসরকারী এয়ারলাইন্স নভোএয়ারের শুভ যাত্রা। তারপরই দ্রুত বাড়তে থাকে মিয়ানমারমুখী বাংলাদেশী পর্যটকদের সংখ্যা। এই দেশটিতে পর্যটনের জন্য অপার সম্ভাবনা বিবেচনা করে নভোএয়ার চালু করে ট্যুর প্যাকেজ। দুদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্ক আরও উষ্ণ করতে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।

সম্প্রতি ঢাকা থেকে একদল ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও পর্যটক মিয়ানমার ঘুরে এসে জানান, এমন দেশের তুলনা হয় না। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতোই সব ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা রয়েছে মিয়ানমারে। অথচ দূরত্ব ও ব্যয়ের বিবেচনায় মিয়ানমারই বেশি লাভজনক। যে কারণে মিয়ানমারের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে এ দেশীয় পর্যটকরদের। মিয়ানমারের চারপাশ জুড়ে রয়েছে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন ও ভারতের সীমান্ত। নদ-নদী, সাগর পাহাড় ও বিস্তৃত দিগন্ত ভূমি ছাড়াও রয়েছে পশ্চিমা সংস্কৃতির ঢেউ। সন্ধ্যার পর নিরাপদে ইয়াঙ্গুন শহরে একাকী ঘুরে বেড়ালেও থাকে না কোন উদ্বেগ। রাত গভীরে আধুনিক হাল ফ্যাশনের নারীরাও নির্বিঘেœ চলাচল করলেও কেউ ভ্রƒক্ষেপ করারও সাহস পায় না।

বাংলাদেশ মিয়ানমার চেম্বারের সূত্র জানায়, বর্তমানে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বার্ষিক এক শ’ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হচ্ছে। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে এটা এক বিলিয়ন ডলারের পৌঁছার টার্গেট নিয়ে কাজ করছে ব্যবসায়ীরা।

নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মফিজুর রহমান জানান, মিয়ানমারের সঙ্গে বিমান যাত্রাটা ঝুঁকি জেনেও সেটা চালু করা হয়েছে শুধু ব্যবসায়িক সফলতার জন্য। দু’দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্কটা যত বেশি উদার হবে, ততই লাভবান হবে উভয়দেশই। এ জন্য নভোএয়ার পর্যটকদের জন্য চালু করেছে সহজলভ্য বিভিন্ন প্যাকেজ। দুই রাত তিন দিনের মিতব্যয়ী প্যাকেজও ঘোষণা করা হয়েছে যাতে নিম্ন আয়ের লোকও সেখানে যাবার সুযোগ পায়। বর্তমানে নভোএয়ার সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট অপারেট করছে। ভাড়াও বিমানের তুলনায় কম।

মিয়ানমারে গত এক যুগ ধরে বসবাস করছেন এমন একজন বিজন বিশি জানান, বাংলাদেশী ওষুধ প্রস্তুতকারীদের কাছে মিয়ানমার ইতোমধ্যে স্বর্গীয় ভূমিতে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ওষুধ মার্কেট বিপুলাংশ দখল করে নিয়েছে ঢাকা। শীর্ষ কোম্পানিগুলোর ওষুধই মিয়ানমারের প্রতিটি ফার্মেসিতে শোভা পাচ্ছে। একইভাবে টেলিকম ব্যবসায়ীদের জন্যও এ দেশটি যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

News Link: http://bit.ly/1QawgtX